১১ মিনিট আগের আপডেট; রাত ১১:৩৫; শনিবার ; ০২ ডিসেম্বর ২০২৩

গ্রেফতারি পরোয়ানা গোপন করে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সাক্ষাতে চেয়ারম্যান সাঈদী!

আমার কক্সবাজার প্রতিবেদক ১৪ জুলাই ২০১৯, ২২:৫৫

চকরিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে জেলা আইনশৃংখলা কমিটির মাসিক সভায় অংশগ্রহণ ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে সাক্ষাতের অভিযোগ উঠেছে।

মূলত কালের কণ্ঠের কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি তোফায়েল আহমদের একটি স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে এই বিষয়টি সচেতন মহলের নজরে আসে। তিনি তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে রবিবার জেলা আইন শৃংখলা কমিটির মাসিক সভায় অংশ নেন।’

বিষয়টি অনুসন্ধান করতে গিয়ে এই প্রতিবেদকের কাছে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির একটি কপি হাতে এসেছে। যেখানে দেখা যায়, তার বিরুদ্ধে পল্টন মডেল থানার দায়ের করা ১২(৫)১৪ নং মামলায় ১৬ জুন ২০১৯ তারিখে ঢাকা মহানগর ৩য় অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান নূর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

মামলার ধারা সমুহ হলো-পেনাল কোড: ৪২০, ৪০৬, ৪৬৫, ৪৬৭, ৪৬৮, ১৭১, ১০৯ এবং ৩৪। আগ্নেয়াস্ত্রের জাল লাইসেন্স দিয়ে পল্টন এলাকার একটি অস্ত্রের দোকান থেকে অস্ত্র কিনার সময় ঢাকার পল্টন থানা পুলিশ সেসময় ফজলুল করিম সাঈদী সহ ২ জনকে গ্রেপ্তার করা করেছিল। এ মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তা ইতিমধ্যে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেছেন এবং মামলাটি আমলী আদালত থেকে বিচারের জন্য বিচারিক আদালতে ট্রান্সফার করা হয়েছে।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপারের কাছে গত ১৫ জুন প্রেরিত ৯২৪ নম্বর গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় বলা হয়েছে-“ফজলুল করিম সাঈদী, পিতা-মৃত ইসহাক আহম্মদ, সাং-হাল কাকরা, ২ নম্বর ওয়ার্ড, চকরিয়া পৌরসভা (সাঈদীর বাড়ী), থানা-চকরিয়া, জেলা-কক্সবাজার নিবাসীর প্রতি-এতদ্ধারা আদেশ করা যাইতেছে যে, আসামিকে ধরিয়া আমার নিকটে উপস্থিত করিবেন। ইহাতে ত্রুটি না হয়।”

চকরিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদীর ফেসবুক প্রোফাইল (https://www.facebook.com/profile.php?id=100011927100666) বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তিনি ১৬ জুন ২০১৯ তারিখে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর থেকে আজ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল , শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি বিপ্লব বড়ুয়া-সহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সাথে সাক্ষাতের ছবি ফেসবুকে পোষ্ট করেছেন।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের একজন নেতা বলেন, “তিনি গ্রেফতারি পরোয়ানার বিষয়টি গোপন রেখে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সাথে সাক্ষাত করে অনৈতিক কাজ করেছেন। একজন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছে এমন আচরণ প্রত্যাশিত নয়। এতে রাষ্ট্রের সম্মানিত ব্যক্তিবর্গরাও অস্বস্তিবোধ করবেন”।

যদিও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাঈদী এই মামলায় জামিনে আছেন বলে দাবী করেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল, সেটা সঠিক। তবে ৪/৫ দিন আগে হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নিয়েছি। জামিনের কাগজপত্র শীঘ্রই সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পৌঁছাবে”।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুপ্রিম কোর্টের একজন সিনিয়র আইনজীবী বলেছেন- “আদালতে মামলার চার্জশীট দাখিলের পর, সে মামলায় আগাম জামিন নেয়ার কোন আইন এদেশে নেই”।