৬৬ মিনিট আগের আপডেট; রাত ৭:৪৯; শুক্রবার ; ২৪ মার্চ ২০২৩

অক্টোবরেই নির্বাচনের ‘খবরে’ প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি, ভার্চুয়াল সভায় শিলং থেকে যোগ দিলেন সালাহউদ্দিন

কালের কণ্ঠ ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৯:৫৫

নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেওয়া হলেও বিএনপি ভাবছে এটি সরকারের কৌশল। বিএনপিকে অপ্রস্তুত রেখে ২০২৩ সালের অক্টোবরে জাতীয় নির্বাচন করা হতে পারে। এ জন্য বিএনপিও দ্রুত আন্দোলন শুরুর কথা ভাবছে। সে অনুযায়ী দলের পরিকল্পনা তৈরি হচ্ছে।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের এমন ধারণার কথা জানা গেছে। সম্প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও এ বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সংবিধানের ১২৩(৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভাঙিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙিয়া যাইবার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে।’ সে অনুযায়ী অক্টোবরের প্রথমার্ধ থেকে আগামী জানুয়ারির প্রথমার্ধের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে হবে।

বিএনপি নেতারা বলছেন, স্বাভাবিকভাবে সরকারের শেষ সময়ে বিরোধী দলগুলো সর্বাত্মক আন্দোলনে নামে। তাঁদেরও সেই রকম প্রস্তুতি আছে। তবে বিভিন্ন সূত্র থেকে বিএনপির কাছে খবর এসেছে, সরকার জানুয়ারির তিন মাস আগে অর্থাৎ আগামী অক্টোবরে নির্বাচনের আয়োজন করতে পারে। ক্ষমতাসীন মহল মনে করে, এতে বিএনপি অপ্রস্তুত থাকবে। দলটির আন্দোলন পরিকল্পনাও ভেস্তে যাবে।

দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিএনপি নেতারাও সরকারের এমন পরিকল্পনা থাকতে পারে বলে মনে করেন। দলের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, এক বছর আগেই নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করে দেওয়ার ব্যাপারে বিশেষ উদ্দেশ্য থাকতে পারে। তাঁরা বলেন, সরকার কখনোই চাইবে না বিএনপি আন্দোলনের প্রস্তুতি রাখুক।

দলের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, সরকারের এমন ভাবনা জানার পর বিএনপি আন্দোলনের সময় নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে। যেকোনো সময় আন্দোলনে নামতে নেতাকর্মীদের প্রস্তুত রাখতে ধারাবাহিকভাবে ব্যতিক্রমী কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই বিএনপি সরকারবিরোধী আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে নিতে চায়। যুগপৎ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোকেও একই বার্তা দেওয়া হয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন আগে হোক আর পরে হোক, সে নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাব না। আমাদের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা আছে, সেভাবে এগুচ্ছি।’

দলের একাধিক নেতা জানান, বিএনপি চলমান আন্দোলন আরো বিস্তৃত করতে চাইছে। ঢাকা মহানগরে চার দিনের পদযাত্রার কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর রাজধানীতে এ কর্মসূচি আরো দেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। যুগপত্ভাবে সারা দেশে একই কর্মসূচি দেওয়ার কথাও দলের ভেতরে আলোচনা হয়েছে। এমনকি মার্চে ঢাকামুখী লং মার্চ কিংবা ঢাকা ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি দেওয়ার বিষয়েও বিএনপি এবং যুগপৎ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর মধ্যে আলোচনা চলছে।

স্থায়ী কমিটির সভায় সালাহ উদ্দিন : ভারতে অনুপ্রবেশের অপরাধে করা মামলার জটে দীর্ঘদিন ধরে মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ে আছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ। গতকাল বুধবার দলের স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় যুক্ত হয়েছিলেন তিনি। তাঁর ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। ২০১৬ সালে স্থায়ী কমিটির সদস্য হওয়ার পর এই প্রথম কমিটির সভায় যুক্ত হলেন তিনি।

সালাহ উদ্দিনের ঘনিষ্ঠ সূত্র আরো জানায়, স্থায়ী কমিটির সভায় যুক্ত হওয়ার পর অন্য সদস্যরা তাঁর শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন। কুশলবিনিময় ছাড়া তিনি রাজনৈতিক বিষয়ে তেমন কোনো কথা বলেননি।

২০১৫ সালের ১০ মার্চ ঢাকা থেকে নিখোঁজ হন বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন। পরবর্তী সময়ে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ে ‘উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘোরাফেরা’ করার সময় ওই বছরের ১১ মে তাঁকে আটক করে শিলং পুলিশ। তাঁর নামে অনুপ্রবেশের মামলা করা হয়। তবে আদালতের এই রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে থেমে যায় সালাহ উদ্দিনের দেশে ফেরা।

বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারে কমিটি : বিএনপির নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, দলের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত যেসব নেতাকর্মী বহিষ্কার হয়েছেন, তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে একটি কমিটি গঠন করার কথা ভাবা হচ্ছে। ওই কমিটি অপরাধের ধরন বিবেচনা করে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের সুপারিশ করবে। সেই সুপারিশের ভিত্তিতে দলের শীর্ষ নেতার অনুমতিক্রমে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হবে। সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার করতে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব এ সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে।

স্থানীয় সরকারের সাবেক ও বর্তমান প্রতিনিধিদের আন্দোলনে নামাতে চায় বিএনপি : ২০০১ সাল থেকে সর্বশেষ নির্বাচন পর্যন্ত বিএনপির যেসব নেতা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হয়েছেন, তাঁদের তালিকা করছে দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর বিভাগ। দলের একটি সূত্র জানায়, সিটি করপোরেশনের মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান এবং পৌরসভার মেয়রদের মধ্যে যাঁরা নির্বাচিত হয়েছেন তাঁদের সঙ্গে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মত বিনিময় করবেন। সরকারবিরোধী আন্দোলনে তাঁদের যুক্ত করতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।